January 16, 2025, 1:31 am

সংবাদ শিরোনাম
মধুপুরে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের উদ্যোগে কৃষক সমাবেশ অনুষ্ঠিত বেনাপোলে বিজিপি বিএসএফ সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ে সীমান্ত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হারিয়ে যাওয়া মায়ের খোঁজে দিশেহারা সন্তানরা ভিসা জটিলতায় বেনাপোল বন্দরে পরিবহন ব্যাবসার ধ্বস তেজগাঁও থানা ছাত্রদলের শীতবস্ত্র বিতরণ কর্মসূচি সম্পন্ন শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি প্রজেক্টরে ভেসে উঠায় স্থানীয় জনতার প্রতিবাদ ঢাকায় দুই ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে জখম করলেন সন্ত্রাসীরা: বেনাপোলে ভারতীয় ভয়ঙ্কর ট্যাপেন্টাডোল জব্দ মধুপুর উপজেলা মেম্বার ফোরামের উদ্যোগে তিন শতাধিক কম্বল বিতরণ লামায়-আলীকদম অনুপ্রবেশকালে ৫৮ মিয়ানমার নাগরিকসহ ৫ দালাল আটক

আগে কোটায় নিয়োগ তারপরে তৈরী হয় বাবার মুক্তিযোদ্ধা সনদ

খন্দকার সোহেল রানা সৈকত

বাবা আব্দুর রাজ্জাক শেখ, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হন ২০০৫ সালে। তবে এর চার বছর আগেই ২০০১ সালে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটায় এএসপি হন তার ছেলে শেখ রফিকুল ইসলাম শিমুল। তারপর যেন আলাদিনের চেরাগ হাতে পেয়ে যান তিনি।

বর্তমানে অতিরিক্ত ডিআইজি পদে থাকা রফিকুল ইসলাম গত দুই যুগে অবৈধ ভাবে অর্জন করেছেন শত শত কোটি টাকার সম্পদ। পুলিশ বাহিনীতে যোগদানের পর প্রভাব খাটিয়ে শুধু নিজের নয় , বিপুল সম্পদের পাহাড় গড়েছেন ভাই, ভাগ্নে, স্ত্রী, শ্বশুরসহ স্ত্রীর পক্ষের আত্মীয়স্বজনের নামেও। দেশের বাইরে স্বর্ণের ব্যবসাসহ রয়েছে অন্তত তিনটি জাহাজ। অবশেষে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তার সম্পদ জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছেন।

দুদক সূত্রে জানা যায়, ২০০১ সালের ৩১ মে ২০তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটায় এএসপি হিসেবে যোগ দেন রফিকুল ইসলাম। সে সময় রফিকুল ইসলামের বিসিএসে হাতে লেখা আবেদনপত্র এসেছে দৈনিক প্রাইভেট ডিটেকটিভ পত্রিকার হাতে। আবেদনপত্রে নিজের নাম লিখেছেন শেখ রফিকুল ইসলাম, বাবার নাম মৃত আব্দুর রাজ্জাক শেখ। আবেদনপত্রে রফিকুল নিজেকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে দাবি করেছেন। রোল নম্বর: ০১৭২৫৫।

পিএসসি সূত্রে সে বছর বিভিন্ন ক্যাডারে চাকরীপ্রাপ্তদের একটি তালিকা এসে পৌছেছে দৈনিক প্রাইভেট ডিটেকটিভ পত্রিকার হাতে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ০১৭২৫৫ রোল নম্বরে ১০৮ নম্বর ক্রমিকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটায় চাকরি পেয়েছেন শেখ রফিকুল ইসলাম। এ ছাড়া বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন থেকে পাঠানো একটি চিঠিতে বলা হয়েছে, শেখ রফিকুল ইসলাম ২০তম বিসিএসের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটার প্রার্থী হিসেবে বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০১ সালে রফিকুল ইসলামের বাবা মৃত. আব্দুর রাজ্জাক শেখ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকা ভুক্তই হননি। রফিকুল ইসলাম পুলিশে চাকরি পাওয়ার আগেই তার বাবা মারা যান। বিসিএসের আবেদনপত্রে রফিকুল ইসলাম নিজেও তার বাবাকে মৃত ঘোষণা করেছেন।

মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের নথিপত্র অনুযায়ী, ২০০৫ সালের ২১ মে বেসামরিক গেজেট ১১৪২ নম্বরে রফিকুল ইসলামের বাবাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, যা জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) ৮০তম সভায় নিয়মিত করা হয়েছে। তার নামে এমআইএস নম্বর ০১৩৫০০১০১০৯। এমআইএস বা ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমে মুক্তিযোদ্ধাদের পূর্ণাঙ্গ তথ্য রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদে চাকরি পাওয়ার পর নিজের ক্ষমতাবলে মৃত বাবাকে গেজেটভুক্ত করে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত করান রফিকুল ইসলাম।

তার আত্মীয় স্বজন ও সহকর্মীরা জানান, পুলিশে চাকরি পাওয়ার পর বেপরোয়া হয়ে ওঠেন রফিকুল ইসলাম। গোপালগঞ্জে বাড়ি হওয়ায় একপর্যায়ে ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদের সঙ্গে। এ ছাড়া বাগেরহাট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েলের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন রফিকুল ইসলাম। এই দুই প্রভাবশালীর প্রভাববলয়ে আওয়ামী লীগ শাসনামলে ১০ বছরের ওপরে বিভিন্ন জেলায় পুলিশ সুপার হিসেব দায়িত্ব পালন করেছেন। এ সময় বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে গড়েছেন অঢেল সম্পদ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার পাইককান্দি ইউনিয়নে ২৭নং বিজয়পাশা মৌজায় খাস খতিয়ানে ১.০৭ একর জমি ভাই ও ভাগ্নি-জামাই সেলিম মীরের নামে তিন বছরের জন্য লিজ নিয়েছিলেন রফিকুল ইসলাম। পরে সেখানে বালু ফেলে স্থায়ীভাবে দখল করে নিয়েছেন। খাসজমির সঙ্গে আসমা বেগম নামে এক নারীর প্রায় ৩ কাঠা জমি অবৈধ ভাবে ভোগ দখলের অভিযোগ উঠেছে। এবং সেখানে প্রায় দেড় একর জমি জুড়ে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে একটি বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ করেছেন রফিকুল।

এ ছাড়া রফিকুল ইসলামের সম্পদের মধ্যে রয়েছে গোপালগঞ্জে নিজ নামে এক জায়গায় ৪৯ শতাংশ জমি, আরেক জায়গায় ৬৭ শতাংশ জমি, ঢাকার মিরপুরের মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের ১০ শতাংশ জমি, নিকুঞ্জে পাঁচ কাঠার প্লট, ফার্মগেটে বহুতল ফাউন্ডেশন দিয়ে গড়া চারতলা ভবন, যেখানে রফিকুল পরিবারসহ বসবাস করছেন। বাড়িটির বাজার দর প্রায় আশি কোটি টাকা।

স্ত্রী ফারজানা রহমানের নামে গোপালগঞ্জের পাইককান্দি ইউনিয়নের আমুড়িয়া মৌজায় ৪৯ শতাংশ জমি ক্রয় করেছেন রফিকুল ইসলাম। জমির বর্তমান বাজার দর প্রায় ২ কোটি টাকা। এ ছাড়া স্ত্রীর নামে ২০২২ সালে গুলশানে ঢাকা ইউনাইটেড হাসপাতালের পাশে ১৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা দিয়ে ৬ হাজার বর্গফুটের ফ্লোর এবং রাজউকের ঝিলমিল প্রকল্পে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি প্লট ক্রয় করেছেন। ঢাকা ও গোপালগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে ভবন ও নিজ নামে জমি কিনেছেন। মানি লন্ডালিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে বিপুল পরিমাণে অর্থ পাচার করেছেন এবং দুবাইয়ে তার একটি স্বর্ণের দোকান রয়েছে।

এর বাইরে আরো অনেক সম্পদ গড়েছেন স্ত্রী ও ভাইদের নামে। রফিকুলের শ্বশুরের নামে রাজধানীর নাখালপাড়ায় পাঁচতলা ও ছয়তলা দুটি ভবন, ভাইদের নামে প্রায় ১০ একর জমি, ভাই আমিনুলের নামে কাকরাইলে ফ্ল্যাট, আরেক ভাই দিদারুলের নামে মোহাম্মদপুরে ফ্ল্যাট, ভাতিজি ঊর্মীর নামে ধানমন্ডিতে ফ্ল্যাট। ভাতিজির স্বামীর নামে একটি বাড়ি, রফিকুলের স্ত্রী ফারহানা রহমানের নামে ‘এমভি সি কোয়েস্ট-৩’ জাহাজ, যার রেজিস্ট্রেশন নম্বর এম-১২৭৩৬। শ্বশুরের নামে রয়েছে দুটি জাহাজ ‘এমভি সি কোয়েস্ট-১’ ও ‘এমভি সি কোয়েস্ট-২’—যার রেজিস্ট্রেশন নম্বর যথাক্রমে এম-৭৫৪৪ ও এম-১২৯৮৩।

এমনকি রফিকুল ইসলামের ব্যক্তিগত দলিল লেখক ও ভাগ্নে উজ্জ্বল মামুন চৌধুরীর নামেও শুধু গোপালগঞ্জেই ৭ একরের ওপরে জমি রয়েছে। গোপালগঞ্জের নবিনবাগে মহিলা মাদ্রাসা রোডে ৩ তলা একটি বাড়ি রয়েছে। রফিকুলের বোন ফেরদৌসী বেগমের নামে অগ্রণী ব্যাংক ঢাকা, গ্রিন রোড শাখায় ১০ কোটি টাকা মূল্য মানের একটি এফডিআর খোলা রয়েছে, যার হিসাব নম্বর ৩০৩৯২৯০০২৩/২০১৭। ভাই মাহফুজুর রহমানের নামে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ২৭নং বিজয়পাশা মৌজায় কানাডা সুপার মার্কেট নামের একটি আধুনিক মার্কেট রয়েছে, যার দাগ নং ৩২৬।

জানতে চাইলে দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দৈনিক প্রাইভেট ডিটেকটিভ কে বলেন, ‘অতিরিক্ত ডিআইজি রফিকুল ইসলামের নামে দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে শত শত কোটি টাকার সম্পদের প্রমাণ মিলেছে, যা তার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত। আমরা সেসব সম্পদ তালিকাভুক্ত করে আদালতে জব্দের আবেদন করেছি। আদালত আমাদের আবেদন মঞ্জুর করে জব্দের আদেশ দিয়েছেন।’

Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর